মাত্র দু’মাস বয়সে মাকে হারিয়েছে সিয়াম। এখন তার বয়স ১০ বছর। ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর শিশু সিয়ামকে দাদির কাছে রেখে তাজরীন ফ্যাশনে কাজে গিয়েছিলেন মা মেরিনা আক্তার। এরপরে আর তিনি ফিরে আসেননি। ওই দিন ঘটা অগ্নিকাণ্ডে তিনি মারা গেছেন। তবে মৃত মেরিনার মরদেহ পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে আধা পোড়া কঙ্কাল।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে দু’বছরের প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে করেন মেরিনা আক্তার ও রুহুল আমিন। ঢাকা মহানগরীর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। সেখানকার তাজরীন ফ্যাশনে মেরিনা ও তাঁর স্বামী অন্য একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন। দুজনের বেতনের টাকা দিয়ে সংসার খুব ভালোই চলছিল। পরে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিয়ামের জন্ম হয়। কিন্তু তাঁদের সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। একই বছরের ২৪ নভেম্বর শাশুড়ির কাছে শিশু সিয়ামকে রেখে তাজরীন ফ্যাশনে কাজে যান মেরিনা। ওই দিন তাজরীন ফ্যাশনে লাগা অগ্নিকাণ্ডে মারা যান তিনি। তবে স্ত্রীর মরদেহ পাননি রুহুল আমিন। মরদেহের জন্য কয়েক দিন অপেক্ষাও করেন। এমনকি তাজরীন ফ্যাশনের পাশের নিশ্চিন্তপুর প্রাইমারি স্কুল মাঠ, ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ও জুরাইন গোরস্থানেও খুঁজেছেন। তবুও মরদেহ পাননি তিনি। সর্বশেষে একটি পোড়া মরদেহ পাওয়া যায় এবং ছেলের ডিএনএ নিয়ে শনাক্ত করা হয়।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর রুহুল আমিন আর ঢাকায় থাকেননি। মা ও ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের তেগাছিয়া গ্রামে। সেখানেই ছেলে সিয়ামকে লালনপালন করছেন তিনি। সিয়াম ধুকুরঝারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। এখন ছেলে সিয়াম মাকে চেনে বাবার সঙ্গে তোলা ছবি দেখে। এখন তাঁর কাছে মা বলতে শুধুই একটি ছবি।
এ বিষয়ে রুহুল আমিন জানান, আজও স্ত্রীর স্মৃতি রুহুল আমিনকে কাঁদায়। ছেলের অনেক প্রশ্নে মুখ লুকিয়ে কাঁদেন তিনি। ওই দিনের আগুনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৬ লাখ টাকা পেয়েছেন তিনি। তবে, এখন পর্যন্ত ওই দিনের ঘটনায় সঠিক বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
বিচারের দাবি করে রুহুল আমিন বলেন, ‘তাজরীন ফ্যাশনে লাগা আগুনের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার কাগজপত্রও পেয়েছি। তবে কবে বিচার হবে তা জানি না। আমি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
মাকে নিয়ে সিয়াম বলে, ‘আমার মাকে দেখার কিংবা ডাকার সুযোগ হয়নি। তবে, আমার মায়ের নির্মম মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার দেখতে চাই।’

সিয়াম নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘সিয়ামের পড়াশোনা চালাতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তার পাশে আছি।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায় আগুনের ঘটনায় ১১৭ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক।
