‘ব্যাটাটার জন্মের পর থাকি হার্টের সমস্যা। হামার অভাবের সংসার কোনো মতে দিন যায়। যা আয় হয় খরচাপাতি করতে শ্যাষ। তারপরও ছোটোতে ছাওয়ার অসুখ ধরা পরার পর থাকি প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হইছে। ডাক্তার সাহেব এবার ভারত যাবার কইছে। আল্লাহ রহম করলে ৪-৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা হইলে ছাওয়াটাক বাঁচা যাইবে। কিন্তুক এত টাকা তো হামারগুল্যার নাই। ছাওয়ার চিকিৎসা কেমন করি হইবে?’ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন জাহিদুল ইসলাম। এই অসহায় বাবা তার ছেলে জিসান মাহমুদ বিপুলকে বাঁচানোর আকুতি জানান। পনেরো বছর বয়সের জিসান হৃদরোগে আক্রান্ত। জন্মগতভাবে তার হার্টে ছিদ্র রয়েছে।
জিসান রংপুর মহানগরীর ৭নং ওয়ার্ডের বেনুঘাট চওড়ারহাট এলাকার গুলালবুদাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা জাহিদুল ইসলাম কৃষি কাজ করেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতা ও চিকিৎসকের পরামর্শে এবার সন্তানকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাহিদুল। কিন্তু অর্থ সংকটে সন্তানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারছেন না। ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে জিসানের চিকিৎসা করিয়ে এখন নিঃস্ব প্রায় তারা।
জিসানের বাবা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মোর তিনটা ব্যাটা, কোনো বেটি নাই। মনোত খালি একটায় কষ্ট, বড় ব্যাটাটা জন্মের ৪ মাস পর থাকি অসুস্থ। রংপুরের তিনজন ডাক্তারকে দেখাচু। মেলা টাকা খরচ করচু বাহে। তাও আশা ছাড়ো নাই। ছাওয়ার জনতে জাগাজমি থেকে শুরু করি অনেক কিছু বিক্রি করচু। ছাওয়া মোর অসুখ নিয়্যা লেখাপড়া করচে। আল্লাহর রহমত পড়াশুনাও ভালো করচে। কিন্তুক বুকের ব্যথার জনতে আগের মতো এ্যলা স্কুলোত যাবার পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাওয়াটা মোর আগের মতো হাসাহাসি করে না। কারো সাথে বেশি কথাও কয় না। শীতকালে বেশি অসুস্থ হয়। এই সময়টাতে কাঁশতে কাঁশতে উয়্যার মুখ দিয়্যা রক্ত বাহির হয়। কয়েক মাস আগোত ডা. নুরুল আফসার, ডা. শাকিল গফুর ও ডা. নুরুল নাহার আপাক দেখাচু। আল্লাহর রহমতে ছাওয়ার ভালো (সুস্থ) হবার সম্ভাবনা আছে। এ্যলা ভারত নিয়্যা যাবার জনতে প্রস্তুতি নিছি। কিন্তু ৪-৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা তো করিবার পারছি না। যদি সমাজের বৃত্তবান মানুষেরা জিসানের চিকিৎসার জনতে কিছু কিছু করি সাহায্য করে তাইলে মোর ছাওয়াটার চিকিৎসা হইবে।’
জিসানের মা বিউটি বেগম ছেলেটা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘টাকার অভাবে ছাওয়ার মোর চিকিৎসা হওচে না। পাসপোর্ট করা হইছে। ভারত যাবার জনতে ভিসা করার চেষ্টা করা হওচে। ভারতোত গেইলে তো টাকা নাগবে। সেই টাকা এ্যলাও জোগাড় হয় নাই। গ্রামের মানুষেরা কিছুটা সাহায্য সহযোগিতা করবে। কিন্তুক ৪-৫ লাখ টাকাতো কায়ো দিবার নায়। দেশের ১৮ কোটি মানুষ, সবাই যদি মোর ছাওয়ার চিকিৎসার জনতে এক টাকা করি দেয়, তাইতো অনেক টাকা হইবে। হামার এত টাকার দরকার নাই, খালি ৪-৫ লাখ টাকার দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ছাওয়ার চিকিৎসার করামো দেকি ডিসি অফিস, সমাজসেবা, মেয়রসহ মেলা মানুষের কাছে সাহায্যের জনতে আবেদন করছি। কায়ো সহযোগিতা করে নাই। সবায় কয় পরে যোগাযোগ করেন। কিন্তুক পরে আর কায়ো কোনো ব্যবস্থা করি দিলে না। এ্যলা মাইনসের কাছে হাত বাড়া ছাড়া হামার উপায় নাই।

স্থানীয় বেনুঘাট চওড়ারহাট এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, জিসান ছাত্র হিসেবে খুব ভালো। অসুস্থ শরীর নিয়েই সাত বছর ধরে পড়ালেখা করছে। আমরা তার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করছি। কিন্তু ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে যাওয়া এবং সেখানে চিকিৎসক দেখানোসহ অপারেশন বাবদ প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা লাগবে। এই টাকা এখনো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সমাজের বিত্তবান হৃদয়বান মানুষেরা যদি অসহায় কৃষক বাবার এই সন্তানের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে ছেলেটার হার্টের অপারেশন করা সম্ভব হবে। আমাদের বিশ্বাস জিসানকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করানো গেলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।
জিসানের বৃদ্ধ দাদা এরশাদ আলী বলেন, মোর নাতিটার জন্য হামার চেষ্টার শ্যাষ নাই। কিন্তুক এ্যলাও কোনো ব্যবস্থা হয় না। আগোত জাগাজমি যা আছলো তারে থাকি কিছু বিক্রি করিয়্যা নাতিটার চিকিৎসা করা হইছে। এ্যলা বিদেশের নিয়্যা য্যায়া ডাক্তার দেবি শেঠিক দেখাইবে। মেলা টাকা নাগবে। সবার কাছে মুই মোর নাতির জনতে সাহায্য সহযোগিতা চাইম।
অসুস্থ শরীরে কোনো রকমে চলাফেরা করছে জিসান। বাড়িতে থেকেই নিয়মিত নামাজ আদায় করে। সে নিজের পড়াশুনোর পাশাপাশি গল্পের বইও পড়ে। জিসান বলে, আমার মা-বাবা সারাক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। আমি জানি জন্মগতভাবে আমার হার্ট ছিদ্র। সুস্থতার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার পরিবারের পক্ষে এতো টাকা এখন ব্যয় করা সম্ভব না। তারপরও আমিও বাঁচতে চাই। সবার তো ইচ্ছে করে পৃথিবীর আলো বাতাসে বাঁচতে। আমার স্বপ্ন আমি সুস্থ হয়ে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হব। মা-বাবার চোখে অশ্রু থাকবে না।
বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলোজি (হৃদরোগ) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাকিল গফুরের তত্ত্বাবধানে জিসানের চিকিৎসা চলছে। ডা. শাকিল গফুর জানান, সময়মতো অপারেশন করাতে না পারলে জিসানের জীবন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। তার ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন।
স্কুলছাত্র জিসান আহমেদ বিপুলকে বাঁচাতে সমাজের দানশীল ও বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন কৃষক বাবা জাহিদুল ইসলাম ও মা বিউটি বেগম। সহযোগিতা পাঠানোর ঠিকানা- জাহিদুল ইসলাম, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, হারাগাছ শাখা রংপুর, সঞ্চয়ী হিসাব নং- ০১০০০০২৯৮৮৮৭৩ অথবা বিকাশ ও নগদ নম্বর- ০১৯২৫০৪৭৩২৮।
