দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় দুই মাস ধরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড পদটি শূন্য রয়েছে। এই পদে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে আছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি নিজ কার্যালয়ে ব্যস্ত থাকায় ভূমিসংক্রান্ত কাজে সময় দিতে পারছেন না। ফলে দূরদূরান্ত থেকে সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ।
সহকারী কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামিমা আক্তার জাহান চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর পদোন্নতি পেয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর নাটোর ডিসি অফিসে সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদে যোগদান করেন। এর পর থেকে পদটি শূন্য হয়ে যায়।
ফলে ৫০০টি খারিজ আবেদন, ১২৯টি মিস কেস ও ভিপিসহ ভূমি সম্পর্কিত সব ধরনের কাজ ঝুলে রয়েছে। অফিস খোলা থাকলেও কর্মকর্তা না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হচ্ছে না। এ কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে, এতে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে, অন্যদিকে কর্মচারীদের দিন কাটছে যেনতেনভাবে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ফুলবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে দেখা গেছে, দূরদূরান্ত থেকে আশা মানুষেরা খারিজসহ ভূমিসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য অফিসের সামনে ভিড় করছেন। কর্মকর্তা না থাকায় দিনের পর দিন ঘুরছেন তাঁরা। খারিজ ছাড়া জমি ক্রয়-বিক্রি করতে পারছেন না। কবে নতুন এসি ল্যান্ড আসবেন তাও জানেন না তাঁরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
কথা হয় এলুয়ারী ইউনিয়নের শালগ্রাম থেকে নামজারি খারিজের জন্য আসা আবেদা বেগমের (৫৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে খারিজের আবেদন জমা দিয়েছি। বারবার এসে ঘুরে যাচ্ছি। এসি ল্যান্ড না থাকায় কাজ হচ্ছে না। নতুন এসি ল্যান্ড কবে আসবেন কেউ বলতেও পারছেন না। খারিজ ছাড়া জমি বিক্রি করতে পারছি না।’
কাঁটাবাড়ী গ্রামের মিলন মণ্ডল (৩৫) বলেন, ‘তিন মাস আগে খারিজের আবেদন দিয়েছি। এখনো ঘুরছি। অফিসার না থাকায় আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের বিষয়টি অনুধাবন করে দ্রুত নতুন এসি ল্যান্ড নিয়োগ দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

শাহিনুর ইসলাম নামে আরও এক ভূমিমালিক বলেন, ‘দুই মাস হলো মিস কেসের আবেদন করেছি। কর্মকর্তা নেই, তাই শুনানি হচ্ছে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, ‘এসি ল্যান্ড স্যারের পদটি দুই মাস থেকে শূন্য থাকায় জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। এ পর্যন্ত খারিজের আবেদন জমা পড়েছে ৫০০-এর বেশি। মিস কেস আবেদন পড়েছে ১২৯ টি। এসি ল্যান্ড ছাড়া এ কাজগুলো করা সম্ভব নয়। ইউএনও স্যার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকলেও ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারছেন না। প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছে, আমরা যতটা সম্ভব বুঝিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছি।’
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘নিজ দপ্তরে কাজের চাপ সামলে সপ্তাহে দুদিন সেখানে বসছি। নতুন এসি ল্যান্ড না আশা পর্যন্ত একটু অসুবিধা হচ্ছে। তিনি এলে এ সমস্যা থাকবে না। নতুন এসি ল্যান্ড নিয়োগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। আশা করছি শিগগিরই এসে যাবেন।’
