হাসপাতালের এমএসআর দরপত্রে ‘অভিনব’ শর্ত জুড়ে দেওয়ায় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় মিটিংয়ে উপস্থিত সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন। রবিবার (২০ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তত্ত্বাবধায়ক। মিটিংয়ে উপস্থিত একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিটিংয়ে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এমএসআর (মেডিসিন ও মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ক্রয়)-এর টেন্ডার প্রক্রিয়ার শর্তে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের একক ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি টাকা স্থিতি ও শেষ পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত জুড়ে দেওয়ায় প্রশ্নে মুখে পড়েন তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন। জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরের অফিস প্রধান এবং চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি দরপত্রে এমন শর্ত জুড়ে দেওয়ার সমালোচনা করেন। তখন তত্ত্বাবধায়ক দাবি করেন যে, পূর্বেও দরপত্র আহ্বানে এভাবে শর্ত দেওয়া হয়েছিল।
মিটিংয়ে উপস্থিত জেলার প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট দফতরের এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘গ্রুপভিত্তিক টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আলাদা আলাদা জামানত চাইলে আলাদা আলাদা ব্যাংক স্থিতিও চাইতে হবে, এটাই নিয়ম। যেহেতু হাসপাতালের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গ্রুপভিত্তিক দরপত্র ও জামানত চাওয়া হয়েছে সেহেতু সব গ্রুপের জন্য এককভাবে ৫ কোটি টাকা ব্যাংক স্থিতি চাওয়া বিধি সম্মত হয়নি বলে মনে করি।’
এমন শর্ত দিয়ে দরপত্র খোলার পর করণীয় কী, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘যদি এমন অসামঞ্জস্য শর্ত সংশোধন না করেই টেন্ডার প্রক্রিয়া অগ্রগামী করে দরপত্র খোলা হয়ে থাকে তাহলে এখন শর্ত সংশোধন করে রিটেন্ডার (পুনরায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি) দেওয়া উচিত।’
মিটিংয়ে উপস্থিত আরেক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘হাসপাতালের টেন্ডার নিয়ে মিটিংয়ে কথা উঠেছিল। এটা নিয়ে একটা কমিটি আছে। ওই কমিটিকে এ নিয়ে বিস্তারিত কাজ করতে বলা হয়েছে।’
আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘গ্রুপভিত্তিক দরপত্রে কোনও ঠিকাদার সব গ্রুপের দরপত্র নাও নিতে পারেন। সব গ্রুপের চাহিত পণ্যের পরিমাণ ও দর এক নয়। কাজেই সব গ্রুপের জন্য একই ব্যাংক স্থিতির শর্ত অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা রিটেন্ডার হওয়া উচিত।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সমন্বয় মিটিংয়ে এটা নিয়ে কথা হয়েছে। আমি তাদেরকে (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে) বলেছি এটা নিয়ে যে নীতিমালা আছে আপনারা সে অনুযায়ী কাজ করবেন। আমি পিপিআর ফলো করে কাজ করতে বলেছি।’
এ ব্যাপারে জানতে সোমবার দুপুরে তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকনের সঙ্গে দেখা করতে জেনারেল হাসপাতালে গেলে পাওয়া যায়নি। পরে তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এমএসআর দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ২ নভেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত দরপত্র জমা নেওয়া হয়। একই দিন দরপত্র খোলা হয়। এরপর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দরপত্র মূল্যায়ন করলেও এখনও সর্বনিম্ন দরদাতা নির্ধারণ করা হয়নি।
এমএসআর পণ্য সরবরাহকারী ঠিকাদাররা বলছেন, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতেই তত্ত্বাবধায়ক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অসামঞ্জস্য ও অভিনব শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে তো নয়ই; দেশের কোনও হাসপাতালের এমএসআর টেন্ডারে এমন শর্ত কখনও দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন ঠিকাদাররা।
