গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা মামলার নারাজির ওপর শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্রের আদালতে এ নারাজির ওপর শুনানী হয়। নারাজি শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি মিনহাজুল হক চৌদুরী, আইনজীবি রফিক আহম্মেদ সিরাজী, গাইবান্ধা জেলা জজ আদালতের আইনজীবি মুরাদ জামান রব্বানী এবং স্থানীয় আদালতের আইনজীবি ফয়জুল আলম রনন।
আইনজীবি রফিক আহম্মেদ সিরাজী বলেন, আমরা এ মামলার জুডিসিয়াল তদন্ত চেয়েছি। বিজ্ঞ আদালত আমাদের কথা শুনেছেন। মহামান্য হাইকোর্টের একটি নির্দেশনায় পুলিশকে সনাক্ত করা হয়েছিল। আদালত সেটার একটা রিপোর্ট চেয়েছেন। সেইসাথে হত্যা মামলার ক্ষেত্রে জুডিসিয়াল তদন্ত হয়েছে কিনা, তার কয়েকটি রেফারেন্স চেয়েছেন আদালত। যত দ্রুত সম্ভব কাগজপত্রগুলো জমা দিতে বলেছেন। তারপর যে আদেশ, সেই আদেশ তিনি আমাদের দিবেন। পরবর্তী শুনানীর জন্য আগামী ২২ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত।
অপরদিকে, একই দিন সাঁওতাল হত্যার বিচার, বসতবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাট ও ক্ষতিপূরণসহ সাতদফা দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাঁওতালরা। সকালে উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর জয়পুরপাড়া সাঁওতাল পল্লী থেকে শতাধিক নারী-পুরুষ প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়ক পায়ে ঁেহটে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌরশহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আদালত চত্বরের সামনে সমাবেশে অংশ নেয়।
সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন রংপুর বিভাগের সভাপতি মাফিয়াস মার্ডি, রংপুর খিষ্টান এসোসিয়েশনের আইনজীবি সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেবাষ্টিমান হেমরম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক জর্জ মারান্ডি, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সুফল হেমরম ও মামলার বাদী থোমাস হেমরম প্রমুখ
এরআগে গত ২ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৯৬ নং অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন সিআইডি। সেখানে মামলার মুল আসামীদের বাদ দিয়ে চার্জশীট দাখিল করলে বাদী পক্ষ চার্জশীট প্রত্যাখ্যান করে নারাজি করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশ সঙ্গে নিয়ে রংপুর চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমিতে আখ কাটতে যান চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীরা। এসময় নিজেদের বাপ-দাদার জমি দাবী করে বাধা দেন সাঁওতালরা। এতে পুলিশ, চিনিকল শ্রমিক ও সাঁওতালদের ত্রিমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে রমেশ টুডু, শ্যামল হেমব্রম ও মঙ্গল মার্ডি নামের তিন সাঁওতাল নিহত হন। আহত হন উভয়পক্ষের অন্তত ৩০জন।
ওই ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে থোমাস হেমরম বাদী হয়ে তৎকালীন এমপি আবুল কালাম আজাদ, চিনিকলের এমডি আব্দুল আউয়াল, থানার তৎকালীন ওসি সুব্রত কুমার সরকার, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল, কাটাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিক সহ ৩৩জনের নাম উল্লেখ করে থানায় এজাহার দাখিল করেন। পুলিশ সেটি জিডি হিসেবে এন্ট্রি করে। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ১৪৪০২/১৬ নং রীট পিটিশন দাখিল করলে থোমাস হেমরমের জিডি ৫৬০/১৬ নং মামলা ইন্ট্রি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআই ২০১৯ সালে ২৩ জুলাই মুল আসামীদের বাদ দিয়ে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে ২৬৩ নং অভিযোপত্র (চার্জশীট) দাখিল করে। এরপর ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর চার্জশীট প্রত্যাখান করে নারাজি দাখিল করা হয়। নারাজি আমলে নিয়ে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
গত ২ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৯৬ নং অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন সিআইডি। সেখানে মামলার মুল আসামীদের বাদ দিয়ে চার্জশীট দাখিল করলে বাদী পক্ষ চার্জশীট প্রত্যাখ্যান করে নারাজি করেন।
Leave a Reply