
সৈয়দপুরে তিস্তা সেচ প্রকল্পের ডালিয়া ক্যানেল খনন কাজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খননকৃত মাটি এলাকায় ক্যানেলের পাড়ে না দিয়ে রাতারাতি
বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে অন্যত্র। পাউবো কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাথে যোগসাজশে ঠিকাদার এই হরিলুট করছে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে খননকাজ প্রতিরোধ করে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের ক্যানেলের ব্রীজে গেলে দেখা যায় শত শত এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। এসময় এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা লিটন খান বলেন, চলমান খনন কাজের উদ্দেশ্য ক্যানেলের উভয় পাড় শক্তিশালী করা। যাতে আগামী বর্ষায় পাড় ভেঙে পানি গড়িয়ে আবাদী জমি ও জনবসতি বন্যা কবলিত না হয়। অথচ খননকৃত মাটি এই এলাকা বাদ দিয়ে ক্যানেলের অন্যত্র নিচু পাড়ে দেয়ার নামে বাইরে বিক্রি করছে ঠিকাদার।

বিগত নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী শামসুল আলম সরকার বলেন, ঠিকাদার মূলতঃ প্রকল্পের সিডিউল বহির্ভূতভাবে ক্যানেলের মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। মাটি পরিবহণে ট্রলি ভাড়া দেয়ার সুবিধা দেয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাদা সরকার এই অবৈধ কাজ বাধা না দিয়ে উল্টো সহযোগীতা করছেন। অথচ বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে অসংখ্য রাস্তা, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ নিচু, খানাখন্দে ভরা। মাটির অভাবে এগুলো মেরামত না করায় জনগণ ভোগান্ডি পোহাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ডালিয়া ক্যানেলের বগুড়া সেচ প্রকল্পের এই বর্ধিতাংশ বাস্তবায়নে এলাকার শত শত লোকের হাজার হাজার একর জমি, ঘর বাড়ি, বাগান দোকান চলে গেছে। সেই মাটি কেটে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের পরিবর্তে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বিক্রির মাধ্যমে গুটি কয়েক ব্যক্তি গোষ্ঠী অর্থ পকেটস্থ করে অন্যায়ভাবে লাভবান হবে, তা আমরা হতে দিতে পারিনা। তাই এলাকার সচেতন মহল এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি।
উপস্থিত লোকজন বলেন, এলাকার মাটি কোনভাবেই অন্য জায়গায় নিতে দেয়া হবেনা। কাজের নিয়মানুযায়ী হয় ক্যানেলের পাড়েই দিয়ে মজবুত করতে হবে, নয়তো এলাকার উন্নয়নে ব্যবহার করতে হবে। বাঙ্গালীপুর তথা সৈয়দপুরের মাটি রংপুর বা নীলফামারী কোথাও যাবেনা। আবার ঠিকাদার, ইউপি চেয়ারম্যান বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে এই মাটি বেঁচে খেতে দিবোনা।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাদা সরকার বলেন, সিডিউল মত এখান থেকে মাটি কেটে নিয়ে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ধোপাঘাট এলাকায় ক্যানেলের পাড়ে দেয়া হচ্ছে। মাটি বিক্রি বিষয়ে আমার জানা নেই। এলাকার কেউ কোন অভিযোগও করেনি। খননকাজ বন্ধ করার কথাও জানিনা। অনিয়ম হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঢাকার মতিঝিলের টিই-এলটি (জেভি) এর সাব কন্ট্রাক্টর মেসার্স মুফাদ কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মোঃ আরমান সরকার বলেন, মাটি যেন চুরি না হয় সেজন্য পাহারায় লোক রাখা হয়েছে। কারণ মাটি কম হলে পরে পাড় সংষ্কারের মাটি কোথায় পাবো? কাজে অনিয়মের কথা ঠিক নয়। তাহলে তো কর্তৃপক্ষই ছাড় দিবেনা। কিছু লোক সুবিধা নিতে এলাকাবাসীকে ভুল বুঝিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার অনলাইন মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রকল্প প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগ সঠিক নয়। মাটি বিক্রির কোন সুযোগ নেই। কেউ করলে ধরিয়ে দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেটা যেই হোক। কিন্তু এভাবে কাজ বন্ধ করলে এলাকারই ক্ষতি। এই এলাকায় মাটি বেশী তাই যেখানে পাড় ভাঙা বা নিচু সেখানে দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে ।
নীলফামারী প্রতিনিধি : তপন দাস
