প্রতিবছর ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ বছর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন ৩৯ জন শিক্ষার্থী।
কলেজটি থেকে প্রতিবছর উত্তীর্ণ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী শুধু বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে নয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ নাম করা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।

অতীতের ন্যায় এবারও রেকর্ড পরিমাণ শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। প্রতিবছর এই কলেজের সাফল্যের কারণে কিছু দিন আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কলেজটি ঘুরে গেছেন।
মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, নীলফামারী মেডিকেল কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, সিলেট মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ, পাবনা মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর এই কলেজ থেকে ২৬৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ২৪৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ৩৯ জন। এর আগে ২০১৮ সালে ৩৬ জন ২০১৯ সালে ৩৮ জন, ২০২০ সালে ৪০ জন শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন শিক্ষার্থী বিসমে জান্নাত হিয়া। তিনি বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি একদিন ডাক্তার হবো। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে চলছে। সাফল্যের প্রতিটি ধাপে শিক্ষকদের কঠোর শ্রম রয়েছে। পড়াশোনা শেষ করে আমি একজন মানবিক চিকিৎসক হতে চাই।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে নুসরাত জাহান ও মিনহাজুল ইসলাম উভয়েই ভর্তির সুযোগ সুযোগ পেয়েছেন। তারা জানান, করোনাকালে কলেজ অনেকদিন বন্ধ থাকায় মোবাইলে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন শিক্ষকরা। নিয়মিত অনলাইন ক্লাস নিয়ে সিলেবাস পূর্ণ করেছেন। আমাদের শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশটা ব্যতিক্রম। স্যারদের বন্ধুত্বসুলভ পাঠদান, ক্লাসের বাইরেও শিক্ষকরা আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে আজ এই সফলতা আমাদের।
মুগদা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন মাহিশা জান্নাত সাম্মিত। তিনি বলেন, ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে এলাকার মানুষের চিকিৎসা করব। আমার সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। আমাদের কলেজের শিক্ষকরা অনেক ভালো, অনেক ভালো পড়ান। সিনিয়ররা অনেক পরামর্শ দিতেন। সেই পরামর্শ কাজে লাগিয়ে আজকে আমি মেডিকেল ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। পড়াশোনা শেষ করে এলাকার অসহায় গরিব মানুষকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা দেব।
অভিভাবক এসএম নুর ইসলাম বলেন, কলেজ থেকে আমাদের নানা রকম নির্দেশনা দেওয়া হতো। অভিভাবক হিসেবে এসব প্রয়োগ করেছি সন্তানের ওপর। কলেজটি এই জনপদের একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।
সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক বলেন, কলেজে পাঠদান চলে গ্রিন, ক্লিন, এনজয়েবল ক্লাসরুম লার্নিং পদ্ধতিতে। এ কারণেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও মননশীলতা দিন দিন বাড়ছে। এ কলেজে ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত স্বচ্ছ। মেধাবী শিক্ষার্থীরাই এ কলেজে পড়ার সুযোগ পান।
তিনি আরও বলেন, কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা এক ধরনের সেতুবন্ধন তৈরি করি। ক্লাসরুমেই সম্পূর্ণ পাঠদান সম্পন্ন করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় প্রয়োজনীয়তা মাথায় রাখা হয়। তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি কোনো চাপ রাখা হয় না।
উল্লেখ্য, নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অতীতে নাম ছিল সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয় (টেকনিক্যাল কলেজ)। ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ রেখেছে। কলেজটিতে কেবলমাত্র বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে। দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সুবাদে এখানেও গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল, এখান থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জন্য দক্ষ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলা। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হয়। আর আজও শিক্ষার মান দিয়ে দেশে নিজের নাম উজ্জল করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
