পঞ্চগড়ে আটোয়ারী উপজেলায় এক বিদ্যালয়ের মৌলবী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক বরখাস্তের প্রতিবাদে একাট্টা হয়ে ক্লাশ বর্জন করেছে সব শিক্ষার্থীরা। অনতিবিলম্বে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং অন্যায়ভাবে শিক্ষককে বরখাস্ত করায় প্রধান শিক্ষকের বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনও ঘেরাও করেছে তারা।
শনিবার (১৪ মে) দুপুরে উপজেলার রাধানগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে কর্মসূচি থেকে সরে যায় শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, সকাল থেকে ক্লাশ বর্জন করে বিদ্যালয়ের মাঠে বিভিন্ন শ্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসবভনের সামনে হাজির হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী আগে থেকেই বিভিন্ন কারণে মৌলবী শিক্ষক মোস্তফা কামালকে হেনস্থা করে আসছে। তুচ্ছ বিষয়েও শিক্ষার্থীদের সামনেই মৌলবী শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন তিনি। এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার (১২ মে) ওই শিক্ষককে অন্যায়ভাবে তিনমাসের জন্য বরখাস্ত করেন প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাপলা আক্তার বলে, আমাদের বিদ্যালয়ের সবচেয়ে ভালো শিক্ষক মোস্তফা স্যার। অথচ স্যারকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমাদের দাবি ছিলো স্যার ছাড়া আমরা ক্লাশে ফিরবোনা। যেহেতু ইউএনও স্যার বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তাই ফিরে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, ওই শিক্ষককে যৌক্তিক কারণে এবং বিদ্যালয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরখাস্ত করা হয়েছ, কোন অন্যায় করা হয়নি।
তিনি বলেন, মৌলবী শিক্ষক মোস্তফা কামাল বিদ্যালয়ের নিয়ম কানুনকে তোয়াক্কা না করে মনগড়া নিয়মে চলেন। প্রায়দিনই যথাসময়ে বিদ্যালয়ে হাজির হননা তিনি। বারবার সংশোধন হতে বলা হলেও ভ্রুক্ষেপ ছিলোনা তার। তার স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি কমিটির লোকজনকে জানালে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
তবে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ অস্বীকার করে মৌলবী শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, আমি সবসময় ন্যায় সঙ্গত কথা বলি এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, এজন্য আমাকে মেনে নিতে পারেননা প্রধান শিক্ষক।
তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক আগে থেকেই আমার সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করতেন। অন্য শিক্ষকরা আধঘণ্টা বিলম্বে আসলেও তাদেরকে কিছু বলা হতোনা, আর আমি দুই মিনিট বিলম্বে এলেও আমার হাজিরা বাতিল করা হতো। এভাবে একাধিকবার আমার হাজিরা বাতিল করে বেতন কর্তন করা হয়েছে। আর এবার তিন মাসের জন্য বরখাস্ত। তিনমাস বেতনভাতা বন্ধ থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহেদ বলেন, প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মৌলবী শিক্ষককে বরখাস্ত করেছেন। এর আগে, অন্যায়ভাবে এই শিক্ষকের হাজিরাও বাতিল করেছিলো। তখন আমি প্রধান শিক্ষককে হাজিরা বাতিল না করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু আইয়ুব আলী অনুরোধ না মেনে জানিয়েছিলেন, অন্য শিক্ষক একঘণ্টা বিলম্বে এলেও কোন সমস্যা নেই, কিন্তু মোস্তফা কামালের এক সেকেন্ড বিলম্ব মানা হবেনা।
এ বিষয়ে আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মমকর্তা (ইউএনও) মুশফিকুল আলম হালিম বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনেছি। তাদেরকে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছি।
