আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি,পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানির অভাবে আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যার বিচারসহ ১৬ দফা দাবিতে ডিসি অফিস ঘেরাও এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ মে) দুপুরে রংপুর নগরীতে এই কর্মসূচি পালন করে আদিবাসী পরিষদের রংপুর জেলা কমিটি।

দুপুরে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর থেকে ১৬ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়, প্রেস ক্লাব চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, সিটি বাজার রোড হয়ে কাচারি বাজারে গিয়ে শেষ হয়।
পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন পরিষদের নেতাকর্মীরা। দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ. ডব্লিউ. এম. রায়হান শাহ্ এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।

এর আগে ঘেরাও কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন- জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আশোক সরকার, রংপুর সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি আলাল সিং, সাধারণ সম্পাদক বিমল খালকো প্রমুখ। এ সময় একাত্মতা প্রকাশ করেন- ওয়াকার্স পার্টির জেলা সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাফিয়ার রহমান।
এ সময় রাজশাহীতে সেচের পানি না দিয়ে দুই আদিবাসী কৃষককে আত্মহত্যা প্ররোচণাকারীর দৃষ্টান্তমূলক বিচারসহ ১৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতারা।
আদিবাসীদের ১৬ দফা দবি গুলো হলো: ১.আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া। ২.সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করা। ৩.দখলি শর্তে খাস জমি,বসতভিটা, কবরস্থান, পুকুর আদিবাসীদের নামে প্রদান করা। ৪.প্রাকৃতিক বনে আদিবাসীদের প্রথাগত অধিকারকে নিশ্চিত করা, বনায়ন ও প্রকল্পের নামে প্রাকৃতিক বন ও বননির্ভর আদিবাসী জীবন বিপন্ন না করা, আদিবাসীদের নামে মিথ্যা বন মামলা ও হয়রানি বন্ধ এবং বনায়নের নামে আদিবাসীদের জমি কেড়ে না নেওয়া। ৫. রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করা অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত কর, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের খাস পুকুরগুলো উদ্ধার করে কৃষকদের সেচের পানি নিশ্চিত করাসহ কৃষিকাজে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ প্রণোদনা চালু করা। ৬.আদিবাসীদের জমি আদিবাসীদের কাছে হস্তান্তরের রক্ষাকবচকে আরো কঠোর করাসহ বিনা অনুমতিতে যেসব দলিল তৈরি হয়েছে সেগুলো বাতিল করা। ৭.সকল আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা নিশ্চিত করা ও আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে একজন করে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ,আদিবাসীদের জন্য উচ্চ শিক্ষা ও প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণীসহ সকল সরকারি চাকুরিতে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ ৫% কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করা। ৮.দিনাজপুর ও নওগাঁয় প্রতিষ্ঠিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীতে দ্রুত জনবল নিয়োগ করা এবং রাজশাহী বিভাগীয় আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীর উপ-পরিচালক পদে আদিবাসীদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া। ৯.শুধুমাত্র থোক বরাদ্দ নয়, জাতীয় বাজেটের অংশ হিসেবে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য পৃথক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।প্রয়োজনে সমতল আদিবাসী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনসহ আদিবাসী কমিশন গঠন করা। ১০.আদিবাসীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ থেকে আদিবাসী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জন্য আইন প্রণয়ন ও সংরক্ষিত আদিবাসী নারী আসনের ব্যবস্থা করা।পাশাপাশি স্থানীয় সরকার কাঠামোতে নির্দিষ্টভাবে সদস্য পদ আদিবাসী নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা। ১১.আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় করা। ১২.বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত আদিবাসীদের দেওয়া প্রতিশ্রæতিগুলো বাস্তবায়ন করা। ১৩.আদিবাসীদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং চর্চার অনুক‚ল পরিবেশ, গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুতসহ আদিবাসী একাডেমী গঠন করা। ১৪.গাইবান্দা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি প্রকৃত জমি মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়া এবং সেই জমিতে সরকার কর্তৃক ইপিজেড স্থাপনের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা। এছাড়াও গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে পুলিশের গুলিতে নিহত তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ১৫.আদিবাসীদের মালিকানাধীন কোন জমি অধিগ্রহন চিরতরে বন্ধ করতে আইন প্রনয়ন কর এবং ১৬. সরকারি গেজেটে বাদপড়া আদিবাসীদের জাতিসত্ত্বাগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি।
কর্মসূচিতে লাল পতাকা ও বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে আদিবাসী পরিষদের রংপুর জেলা, সদর উপজেলা, বদরগঞ্জ উপজেলা কমিটি ছাড়া সমর্থন জানিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনএনএমসি ফাউন্ডেশন অংশ নেয়।
