বেশ সুস্বাদুর কারনে হাড়িভাঙ্গা আম সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই আমের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। রংপুরে বেড়েছে হাড়িভাঙ্গার দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতারা বলছেন, অনেক ক্রেতাই এখন আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তবে কেনার পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক কম।
গত ১০ দিন আগেও যে স্থানগুলোতে পাইকাররা এসে আম বিক্রি করতেন এখন সেসব স্থানে হাতে গোনা কয়েজন পাইকারকে আম বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রংপুর নগরীর টার্মিনাল বাজার, সিটিবাজার ও লালবাগ রেলগেটসহ কয়েকটি আমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অল্প কিছু পাইকার ক্যারেটে করে থরে থরে সাজিয়ে কাঁচা ও পাকা হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করছেন। এসব স্থানে পাকা হাড়িভাঙ্গা আম ১০০ থেকে ১২০ টাকা আর কাঁচা আম আকার ভেদে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়াও রংপুরের বিভিন্ন অলিগলিতে সাইকেলে ক্যারেট নিয়ে আম বিক্রি করতে দেখা গেছে অনেককে।
রংপুর কৃষি বিভাগ জানায়, আবহাওয়া ভালো থাকায় জুনের ১৫ তারিখ থেকে জুলাইয়ের মধ্য সময়ে প্রায় ৯৫ শতাংশ গাছ থেকে আম নামানো হয়েছে। অন্যবারের চেয়ে এবার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়াসহ আমের ব্যবসা মোটামুটি ভালো হয়েছে বলেও জানায় তারা।

রংপুর নগরীর লালবাগ রেলগেট এলাকার আম কিনতে আসা রাকিব আল হাসান নামের এক যুবক বলেন, ‘গরমে পাকা আম বাসায় নিয়ে খাওয়ার উপযোগী থাকে না। তাই ফ্রিজে রেখে খাওয়ার জন্য কাঁচা পাঁচ কেজি বড় সাইজের আম কিনলাম ৮০০ টাকা দিয়ে। আমের যে দাম ভালো ফ্রেশ আম যারা নিয়ে এসেছেন তাদের সঙ্গে দামাদামি করাই যায় না।’
রংপুর নগরীর লালবাগ রেলগেট এলাকার আম বিক্রেতা রাশেদ বাবু বলেন, ‘এবার হাড়িভাঙ্গা আম বেশি সময় ধরে রেখে বিক্রি করতে পারি নাই প্রচণ্ড গরমের কারণে। গরমে বেশি পাকার টেনশনে দিনে দিনে আম বিক্রি শেষ করতে হয়েছে। তার পরেও ব্যবসা গত ১৫-২০ দিনে মোটামুটি ভালো হয়েছে। এখন বাগানে আম প্রায় শেষ। গাছে থাকা শেষ আমগুলো বেশি দামে কিনে এনে বিক্রি করছি। আগামী এক সপ্তাহ পরে এই আম আর পাওয়া যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাকা আম শক্ত নরম ভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কাঁচা আম সাইজ ভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাড়িভাঙ্গার বেশি দাম হওয়ায় এখনকার ক্রেতারা এক কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি আম কিনছেন।’
হাড়িভাঙ্গা আমের গোড়াপত্তনকারী মৃত নফল উদ্দিন পাইকারের ছেলে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘হাড়িভাঙ্গা আমের জন্য প্রসিদ্ধ মিঠাপুকুরের খোরাগাছসহ আশপাশের এলাকার আম বাগানের প্রায় ৯৫ শতাংশ আম শেষ হয়েছে। এসব এলাকার বাগানগুলোতে যে ৫ শতাংশ আম আছে সেগুলো বাগান থেকেই ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ছোট ছোট পাইকাররা।’
আমজাদ হোসেন বলেন, গত তিন-চার বছরের চেয়ে এবার ব্যবসা ভালো হয়েছে। এতে বাগান মালিকসহ পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বেশ লাভোবান হয়েছেন।
রংপুর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় প্রায় ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙ্গা আম উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিলো ২৯ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন।
