আলু ক্ষেতে পঁচনরোধক ভেজাল ওষুধ ব্যবহারে অন্তত ৮০ জন কৃষকের প্রায় ১০০ একর জমির আলু নষ্ট হয়ে গেছে রংপুরে। এতে করে কৃষকদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নগরীর তাজহাট থানার ভুরারঘাটের ছিলিমপুরসহ ৫টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষক পুঁজি হারিয়ে এখন হাহাকার করছেন। তারা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে আকস্মিক বজ্রসহ ঝড়ো হাওয়া ও অবিরাম বৃষ্টিতে আলু ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতির লক্ষণ দেখা দেয়। এসময় ‘গেটকো ক্রপ হেলথ’ কোম্পানির সুপারভাইজারসহ অন্যরা ক্ষেতে গিয়ে তাদের কোম্পানির ‘জি-সাইন ৫০ ডব্লিউপি’ নামক পচনরোধক ওষুধ ব্যবহার করতে বলে। তাদের কথামতো ছিলিমপুর, দুর্গাপুর, ভরটপাড়া, কোলারপাড়া ও ফতেপুরের কৃষকরা পচনরোধক ওই ওষুধ ব্যবহার করেন।

কয়েকদিন পর ধীরে ধীরে আলু ক্ষেতের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকলে কোম্পানির লোকজনকে খবর দিলে তারা এসে নানান অজুহাত দেখিয়ে টালবাহনা করে কেটে পড়েন। পরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। ক্ষতিপূরণ চেয়ে এই অভিযোগের অনুলিপি কৃষিমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ৯ জনের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
ভুরারঘাটের দুর্গাপুর এলাকার মুক্তা মাস্টার বলেন, ‘১৫ একর জমির তরতাজা আলুর গাছ কেবল লকলক করে উঠছিল। বয়স ৪৫-৫০ দিন হয়েছে। দু’বার ওই ওষুধ দেওয়ার পর চোখের সামনে গাছগুলো মরে গেল। গাছের বয়স ৯০ দিন না হলে আলু তোলা যায় না। সবই শেষ হয়ে গেল। ’

একই অভিযোগ করেন কোলারপাড় ও ফতেপুর এলাকার কৃষক নাজমুল, সহিদুল, সাহেব আলী, মিলন ও মোজাহার হোসেন। তারা বলেন, ‘গেটকোর ওষুধ দেওয়ার পর জমির ঘাস এবং আলুগাছ ঝলসে গেছে। এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আলুর আবাদ করেছি। কোম্পানি ক্ষতিপূরণ না দিলে আন্দোলন করা ছাড়া উপায় থাকবে না। ’
সিলিমপুর মধ্যপাড়া এলাকার চাষি আবুল কালাম বলেন, ‘আলুগাছের পচনরোধে ভুরারঘাট বাজারের ওসমান আলীর ‘মায়ের দোয়া সারঘর’ থেকে ‘জি-সাইন ৫০ ডব্লিউপি’ কিনে জমিতে দিই। কিছুদিন পর থেকে গাছ পুড়ে যাওয়া শুরু করে। আস্তে আস্তে সব গাছ পুড়ে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
গেটকো ক্রপ হেলথ কোম্পানির রংপুর অঞ্চলের ব্যবস্থাপক হাশেম আলী বলেন, ‘আমাদের ওষুধের কারণে এমনটা হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে এ বিষয়ে বলতে পারব।
তাজহাট থানার এসআই সেলিম বলেন, ‘আমি ক্ষেতগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। অভিযুক্ত দোকানদের ডাকা হয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান ম-ল বলেন, ‘কৃষকরা আমাদের অনেক দেরিতে জানিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ক্ষতিকর কিছু ব্যবহারের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। মাটি, আলু ও কীটনাশকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
