যে বয়সে পড়াশুনা, খেলাধূলা করে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা তার। কিন্তু তার জীবন অন্য আরও পাঁচটি শিশুর মতো নয়। এই বয়সে সাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়ে গ্রামে গ্রামে আইসক্রিম বিক্রি করতে হয় সোহাগ ইসলামকে। তার বাড়ি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার কেতকিবাড়ি গ্রামের। সে স্থানীয় উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।
ঘরে অসুস্থ ভ্যান চালক বাবা সোহাগের। চারজনের সংসার। বাবা এখন আর তেমন কাজ করতে পারে না। সংসারের খরচ যোগাতে পড়াশুনার পাশাপাশি আইসক্রিম বিক্রি করে সোহাগ।

প্রতিদিন সকালে কাঠের বাক্স ভর্তি ১ টাকার, ২ টাকার আইসক্রিম নিয়ে বের হয় সোহাগ। আইসক্রিম বিক্রির ফাঁকে স্কুলের ক্লাস করে। স্কুল শেষে গ্রামের এ পাড়া-ও পাড়ায় ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করে। দিন শেষে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি হয়। এরপর বাড়ি ফেরে। আয়ের টাকা তুলে দেয় বাবার হাতে। রাতে পড়তে বসে। প্রাইভেট পড়ার সামর্থ নেই। নিজে নিজে যতটা পারে পড়ে। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর আগে পরের দিনে কাজের পরিকল্পনা করতে হয়। এভাবে চলছে সোহাগের দৈনন্দিন জীবন।
সোহাগ ইসলাম জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে সে আইসক্রিম বিক্রি করতো না। করোনায় স্কুল বন্ধ হলো। তার বাবারও কাজ কমে গেলো। সংসার চলছিল না। একদিন, দুদিন করে আইসক্রিম ব্যবসা শুরু করলো। আর এখন ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে লেখাপড়া করে।

সোহাগ ইসলাম জানায়, সারা দিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি হয়। এরমধ্যে আইসক্রিম কিনতে লাগে ২৫০ টাকা। ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাভ হয়। মাঝে-মধ্যে কিছু আইসক্রিম গলে গেলে লাভ কমে যায়। লাভের টাকা সংসারের জন্যে বাবার হাতে তুলে দেয়।
সোহাগের মা বলেন, সোহাগের বাবা যক্ষ্মা রোগী। আগের মতো পরিশ্রম করতে পারে না। বাড়িতে চারজন মানুষ। আগের মতো আয় নেই। সেই জন্য সোহাগকে আইসক্রিম বেচতে হয়। সোহাগ প্রতিদিন ওর বাবার কাছে টাকা দেয়। সেটা দিয়ে সংসার চলে।
কেতকিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্কুল বন্ধ ছিল। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী কাজে জড়িয়ে পড়েছে। সোহাগও তাদের মতো। স্কুল থেকে যতটা সম্ভব তাকে সহযোগিতা করা হবে।
