মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ-আফগান সিরিজ। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এ বছরে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে নামবে টাইগার বাহিনী। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলা বরাবরই রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। তিন ম্যাচের এই সিরিজেও জমজমাট হবে বলে আশাবাদী দুদলই। বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল জয় দিয়েই শুরু করতে চায় ওয়ানডে সিরিজ। অন্যদিকে টেস্ট জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আফগানিস্তান।
প্রায় সাত মাস পর ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিম মনে করছেন সফরকারী আফগানদের সঙ্গে প্রথমে ওয়ানডে সিরিজ খেলাটাই তার দলের জন্য ভালো হবে। আফগানদের স্পিন আক্রমণ চিন্তার কারণ হলেও তাদের বিপক্ষে ভালো খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফগানদের সঙ্গে বহুবার ভুগতে হলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন বড় দলের সারিতে। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে নিয়মিত দেখা হলেও দুদলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়েছে খুবই কম। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মাটিতে দুদল একমাত্র দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছিল। আফগানদের সঙ্গে খেলা সেই একমাত্র সিরিজে ২-১ এ জয় পেয়েছিল টাইগার বাহিনী।

পরিসংখ্যান বলছে, আজকের ম্যাচে জয়ের পাল্লা বাংলাদেশের পক্ষেই ভারী। দুদলের আট দেখায় পাঁচবারের বিজয়ী বাংলাদেশ। তবে খেলাটা যদি হয় বাংলাদেশের মাটিতে তবে লড়াইটা আবার সমানে সমান হয়ে যায়। নিজেদের দেশের মাটিতে আফগানদের মোকাবিলা করতে নেমে চার ম্যাচে দুবার হেরেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ আফগানিস্তান শেষবার মুখোমুখি হয়েছে আজ থেকে ৩ বছর আগে। ২০১৯ আইসিসি বিশ্বকাপ ইভেন্টে। ম্যাচটিতে একা হাতেই আফগানদের উড়িয়ে দেন সাকিব আল হাসান। ৬৯ বলে ৫১ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ৫ উইকেট নেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। ম্যাচটিতে ৮৩ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম।

সাগরিকায় আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশ অনুমান করা যায় কিছুটা। মিরপুরের বধ্যভূমির মতো স্পিনারদের স্বর্গভূমি নয় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট। তাই আজ দলের স্পিন নির্ভরতা থাকবে কম। রশিদ-মুজিব-নবীর স্পিন ত্রয়ীর বিষাক্ত ছোবল হয়তো ততটা কার্যকর হবে না এই উইকেটে। রানবন্যার জন্য বিখ্যাত মাঠে বাংলাদেশ দল নামতে পারে সাতজন ব্যাটার নিয়ে।
এই সিরিজের আগে তামিমের দুশ্চিন্তার জায়গা ছিল দলের পাঁচ নম্বর পজিশন নিয়ে। সাকিব আল হাসান এখন ব্যাট করতে নামেন ওয়ান ডাউনে। তাই পাঁচ নম্বরে সাকিবের নির্ভরতার নিশ্চয়তা দেওয়ার মতো কাউকে দরকার বাংলাদেশ। এই পজিশনের লড়াইটা এই সিরিজে হতে পারে দলের দুই নতুন মুখের মধ্যে। পাঁচ নম্বরে অভিষেক হতে পারে বিপিএলে দারুণ খেলা মাহমুদুল হাসান জয় কিংবা ইয়াসির রাব্বির। ঘরোয়া ক্রিকেট ও যুবদলে ওপেনিংয়ে খেলা জয়কে পাঁচ নম্বরে নামানোর পেছনে তামিমের যুক্তি হচ্ছে জয়কে ঘরোয়া ক্রিকেটে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে দেখেছেন তিনি।তাছাড়া জয় স্পিন বলটা খেলেন দারুণ। তরুণদের মাঝে জয়ই সবচেয়ে ভালো স্পিন খেলতে পারেন বলে মনে করেন তামিম। ইয়াসির রাব্বির বেলাতেও তামিমের একই মত।
আজ যেই নামুক, পাঁচ নম্বর ব্যাটারের কাছে তামিমের চাওয়া দলের অবস্থা বুঝে ব্যাটিং। এই পজিশনটা দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। দলের অবস্থা বুঝে কখনো ঝড়ো ব্যাটিং করতে হয়, আবার শুরুতে দ্রুত উইকেট হারালে দলের বিপর্যয়ে হালও ধরতে হয়। যুব বিশ্বকাপ মাতানো জয় বা ইয়াসির রাব্বির সেই সামর্থ আছে বলেই বিশ্বাস করেন তামিম।
অন্যদিকে টেস্ট জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আফগানিস্তান। স্টুয়ার্ট ল, কোচিং প্যানেলে যুক্ত হওয়ায় আশার পালে হাওয়া লেগেছে তাদের। বাংলাদেশের এই সাবেক কোচ সাকিব-তামিম-মুশফিক-রিয়াদদের চেনেন খুব ভালো করেই। এ দেশের কন্ডিশনও চেনা তার।
বিপিএলের মাঠেও নিয়মিত আফগানরা, খেলেছেন এই আসরেও। তাছাড়া এই সিরিজের প্রস্তুতি নিতে বেশ আগে এ দেশে এসেছে আফগান দল। এসেই সিলেটে ক্যাম্প করে প্রস্তুতি সেরেছে হাসমতুল্লাহ শহিদীর দল। বাংলাদেশকে সমীহ করলেও ছাড় দিতে রাজি নন তিনি। নিজেদের শক্তিমত্তায় ভরসা আছে তার। তার দলের স্পিন ত্রয়ী হতে পারে এই সিরিজে তার ট্রাম্পকার্ড। আর বাংলাদেশকে খুব ভালো চেনেন বলেই আশা করছেন জয়ের, এমনটাই বলছেন আফগান দলপতি হাসমতুল্লাহ।
