ভৌগোলিক সীমারেখার বেড়াজালে বন্দি দুই বাংলার মানুষ চান স্বজনদের সান্নিধ্য। আত্মার সুতোয় বাঁধা ভারত-বাংলাদেশের এসব বাঙালি সুযোগ পেলে তারা পরস্পর মিশে যান। নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি পহেলা বৈশাখে পঞ্চগড়ের সীমান্তে বসে কাঁটাতারের মাঝে মিলনমেলা।
বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি মহামারি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে গত তিন বছর ধরে দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্তে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দুই বাংলার মিলনমেলা হয়নি। চতুর্থবারের মতো এবারও বসছে না কাঁটাতারের এ মিলনমেলা।

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিজিবি জানায়, বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের কারনে গত ২০১৯-২০ ও ২১ সালে পঞ্চগড় সীমান্তে দুই বাংলার কাঁটাতারের মিলনমেলা হয়নি। এবারও হচ্ছে না এই মিলন মেলা। সীমান্তে এই মেলা চালুর বিষয়ে একটা দরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু দুই দেশেরই মাঝে ১০০% প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় ভারত বাংলাদেশ সহ সকল দিক থেকে এ বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেছে। তাই এবারও বসছে না এই মিলন মেলা। তবে ইনশাল্লাহ আগামীতে এই মেলা বসবে বলে আমরা মনে করছি।
সাধারণত পহেলা বৈশাখ ও ২ বৈশাখে সীমান্তে এই মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে পঞ্চগড়ের অমরখানা, শুকানি, মাগুরমারি ও ভূতিপুকুর সীমান্তসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টের কাঁটাতারের পাশে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দুই বাংলার এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুইদেশের হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে একে অন্যের সঙ্গে কথা ও ভাব বিনিময় করেন। তবে এবারো সেই অন্যরকম আনন্দ চোখে পড়বে না।

ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির আগ পর্যন্ত এই জেলা ভারতের জলপাইগুড়ি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু, দেশ ভাগের কারণে এখানে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও দুদেশের নাগরিকরা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াতের সীমিত সুযোগ পেতেন। কিন্তু, সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পর থেকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন তারা। উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় এক যুগের বেশ কিছু সময় ধরে বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে নববর্ষের দিন তারা কাঁটাতারের দুই ধারে এসে দেখা করার সুযোগ পান।
তবে টানা তিন বছর ধরে পহেলা বৈশাখে পঞ্চগড়ের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অভিমুখে এ মেলা হয়নি। এবারও হচ্ছে না।
এদিকে পঞ্চগড়ের কিছু সীমান্ত অংশ নীলফামারী ৫৬ বিজিবির অধীনে থাকায় তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
