ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী, হলোখানা, মোগল বাসা, যাত্রাপুর ও ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নসহ নদ-নদী অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুরে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার, সদর পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকে ধান, চাল, চুলা ও শুকনো খড়িসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র চৌকি কিংবা উচু স্থানে তুলে রেখেছেন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পরিবার নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্যের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পোড়ারচর ও পূর্ব তিন হাজারী, মুছল্লীপাড়া, কালির আলগা, মণ্ডলপাড়া, পশ্চিম মুসল্লি পাড়া, ঝুনকার চর, ভগবতীপুর ও পার্বতীপুর এলাকা প্লাবিত হয়ে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সদরের হলোখানা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলজার হোসেন মণ্ডল জানান, ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সন্ন্যাসীর চর, মদাজলের নিম্নাঞ্চল, চর সারডোব, ছাট কালুয়া, লক্ষ্মীকান্ত, মাস্টারের, চর আরাজী পলাশবাড়ীসহ হেমের কুটি এলাকা প্লাবিত হয়ে বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পরেছে।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ইউনিয়নের ৯টি ওর্য়াডের মধ্যে ৭টি ওর্য়াডের শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ রাস্তাগুলো তলিয়ে গেছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত ৭ দিন ধরে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে এসব এলাকায় বসতরত পরিবারগুলো দুর্ভোগে পড়েছেন। এ ছাড়া গত কয়েকমাস ধরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের কবলে পড়ে পোড়ারচর, গোয়াইলপুরী ও পূর্ব তিন হাজারী এলাকার প্রায় ৪৫টি পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের কবলে রয়েছে এখনও ৭-১০টি পরিবারের বসতভিটা।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে এ এলাকার কয়েকশ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আজ পানিবন্দী মানুষজনের মাঝে প্রাথমিকভাবে ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার চরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
