জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও শিল্পপতি করিম উদ্দিন ভরসা (৮৭) গত শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুর ১২টা ৮মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছিলেন।
সাবেক এমপি করমি উদ্দিন ভরসার সপ্তম পুত্র কামরুল ইসলাম ভরসা তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভিযোগ জানান, রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে মারা যান আমার বাবা। তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন। আমার দুই ভাই সিরাজুল ইসলাম ভরসা এবং সাইফুল উদ্দিন শিমুল ভরসার কাছে বন্দি থাকা অবস্থাতেই বাবাকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে এক সপ্তাহ আগে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্ত কোনো ভালো ভ্যাকসিন দেয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সত্বের আমাদের অপর ১২ ভাইবোনের সাথে মৃত্যুও সময়ও বাবার সাথে দেখা করতে দেয়নি তারা। ফলে আমরা আমাদেও গর্বিত বাবার সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা বাইরে থেকে ওই দুই ভাইকে অনুরোধ করেছিলাম বাবাকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু তারা তা করেনি।
তবে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে সিরাজুল ইসলাম ভরসা এবং সাইফুল উদ্দিন শিমুল ভরসা বলেছেন, আমাদের বাবার চিকিৎসার কোনরকম অবহেলা করা হয়নি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভালো মানের এভারকেয়ার হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা করা হয়েছিল। বাবার শারীরিক অবস্থা দেশের বাহিরে নেবার মত ছিল না। ডেথ সার্টিফিকেট দেখলেই সব বুঝতে পারবেন।

কামরুল ভরসা গণমাধ্যমে যে অভিযোগ করেছেন যে সম্পত্তি অবৈধ ভাবে লিখে নেয়ার জন্য বাবাকে বন্দি করেছিলাম আমরা। সেই অভিযোগ সঠিক নয়। কেননা আদালতের আদেশেই বাবা আমাদের কাছে ছিল।

সিরাজুল ইসলাম ভরসা এবং সাইফুল উদ্দিন শিমুল ভরসা কান্নাজড়িত কন্ঠে অন্যভাই-বোনদের প্রতিবেদকের সংবাদের মাধ্যমে জানাতে বলেন, দয়া করে বাবার মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন না। সবার কাছে বাবার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
করিম উদ্দিন ভরসা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিড়ি সিগারেট, ম্যাচ ফ্যাক্টরি, কাগজ মিল, কোল্ড স্টোরেজ, হাউজিং, ইমপেক্স, আরকে ফ্যানসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা গড়েছিলেন তিনি। সেখানে একসময় প্রায় ৩০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করতেন। সংসদে দাঁড়িয়ে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় ‘হামার সরু সড়ক চ্যাপ্টা করি দাও বাহে স্পিকার’ বক্তব্য দিয়ে দেশে বিদেশে আলোচিত ছিলেন তিনি। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তার মৃত্যুতের শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো রংপুরে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুর-৩ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব সাদ এরশাদসহ রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, প্রেসক্লাব, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী-শ্রমজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং মরহুমের প্রতিষ্ঠিত সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী-শ্রমিকবৃন্দ তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়েছে।
